সোমবার, ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ০৫:৪৪ পূর্বাহ্ন
ভিশন বাংলা ডেস্ক: প্রাণ বাঁচাতে মিয়ানমার থেকে ২০১৭ সালের ২৪ আগস্ট রোহিঙ্গারা পালিয়ে আসা শুরু করে বাংলাদেশে, দেখতে দেখতে পেরিয়ে গেছে দুই বছর। রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসনের জন্য দুইবার সময় ঠিক করা হলেও তা ভেস্তে গেছে বিভিন্ন কারণে। বর্তমানে কক্সবাজারের উখিয়া টেকনাফের ৩২ টি ক্যাম্পে প্রায় ১১ লাখ রোহিঙ্গার বসতি। নতুন পুরাতন মিলে তাদের সাথে যোগ হয়েছে গত দুই বছরে জন্ম নেওয়া ৯১ হাজার শিশু।
ইউএনএইচসিআরের জনসংখ্যা বিষয়ক রিপোর্টে এ তথ্য উঠে এসেছে।
রোহিঙ্গাদের মধ্যে জন্ম নিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি গ্রহণের সংখ্যাও কম। নেই কোনো আগ্রহ। এক একটি পরিবারে সদস্য সংখ্যা গড়ে ১০ থেকে ১৫ জনের মত।
২০১৭ সালের আগস্ট মাসে মিয়ানমারের আরাকান প্রদেশের ৯টি সেনা চৌকিতে সন্ত্রাসী হামলার অজুহাতে মিয়ানমারের সামরিক বাহিনী রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর ওপর অত্যাচার-নিপীড়ন শুরু করে। সেই সাথে চলে ধর্ষণ বসত-বাড়িতে অগ্নিসংযোগ হত্যাসহ নানা লোমহর্ষক ঘটনা। সে বছরের ২৫ আগস্ট থেকে প্রাণ বাঁচাতে কক্সবাজার ও বান্দরবান সীমান্ত দিয়ে হাজার হাজার রোহিঙ্গা এদেশে প্রবেশ করতে থাকে। এ সময় বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশে মানবিক কারণে সীমান্ত খুলে দিয়ে প্রাণ বাঁচাতে আসা রোহিঙ্গাদের বাংলাদেশে আশ্রয় দেওয়া হয়।
বর্তমানে কক্সবাজারের উখিয়া টেকনাফের ৩২ টি ক্যাম্পে এসব রোহিঙ্গারা বসবাস করছে। বাংলাদেশ সরকারের সহযোগিতায় দেশি-বিদেশি উন্নয়ন সংস্থা তাদের খাবার এর ব্যবস্থা করছে। বাংলাদেশে আসা রোহিঙ্গাদের মধ্যে পুরুষের চেয়ে নারীর সংখ্যা বেশি । অনেকে আবার এখানে এসে ক্যাম্পে বিয়ে করেছেন। এসব রোহিঙ্গা নারীদের মধ্যে জন্মনিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি গ্রহণের আগ্রহ কম বলে জানান পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তরের কক্সবাজারের সহকারী পরিচালক ডাক্তার পিন্টু কান্তি ভট্টাচার্য্য।
পিন্টু কান্তি ভট্টাচার্য্য বলেন, সরকারি বেসরকারি ১২০টি স্বাস্থ্য কেন্দ্র থেকে এসব রোহিঙ্গা নারীদের জন্মনিয়ন্ত্রণের বিষয়ে সচেতন করা হচ্ছে।
ক্যাম্পে বসবাসকারী রোহিঙ্গাদের সাথে কথা বলে জানা যায়, তাদের বেশিরভাগ পরিবারের সদস্য সংখ্যা ১০ থেকে ১৫ জনের মধ্যে।
উখিয়ার মধুর ছড়া রোহিঙ্গা ক্যাম্পের বয়স্ক রোহিঙ্গা আব্দুল মজিদ জানান, তার দুই স্ত্রীর ২২ জন সন্তান রয়েছে। জন্মনিয়ন্ত্রণের ব্যাপারে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আল্লাহর নির্দেশে সন্তান সন্তানাদি হয়, সেখানে ওষুধ খেয়ে বন্ধ করলে কেমন দেখায়।
একই ক্যাম্পের নতুন বিবাহিত আবুল কাশেম বলেন, আমার স্ত্রী ৬ মাসের অন্তঃসত্ত্বা। স্বাস্থ্য সহকারীরা আমার স্ত্রীকে বড়ি খেতে বলছে। কিন্তু আমি নিষেধ করেছি। কারণ এটা আল্লাহর হুকুম।
ক্যাম্প গুলোতে স্বাস্থ্য নিয়ে কাজ করে এমন একটি সংস্থা আর টি এম এর ম্যানেজার নাসরিন আক্তার মনিকা বলেন, রোহিঙ্গা নারীরা এ ব্যাপারে আগের চেয়ে একটু সচেতন হচ্ছে। নিজের শরীরের কষ্ট তারা বুঝতে পারছে। কিন্তু পুরুষদের মাঝে একেবারেই আগ্রহ নেই। অনেক নারী পদ্ধতি গ্রহণের জন্য এগিয়ে আসছেন বলেও জানান তিনি।
ইউএনএইচসিআরের জনসংখ্যা বিষয়ক রিপোর্টের উদ্ধৃতি দিয়ে শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশন কার্যালয়ের অতিরিক্ত কমিশনার শামসুদ্দোজা নয়ন জানান, গত ২ বছরে ৩২টি রোহিঙ্গা ক্যাম্পে ৯১ হাজার শিশুর জন্ম হয়েছে। তারমধ্যে ১ বছরের নিচে রয়েছে ৩১ হাজার শিশু। আর দু বছরের নিচে রয়েছে ৬০ হাজার শিশু। জনসংখ্যা রোধ করতে ক্যাম্পগুলোতে নানা কার্যক্রম চলছে বলেও জানান তিনি।
কক্সবাজারের জেলা প্রশাসক মোঃ কামাল হোসেন বলেন, রোহিঙ্গাদের এখানে বসবাসের পাশাপাশি তাদের মানবিক কারণে খাবারের ব্যবস্থা করা ও সেই সাথে নিজ দেশে ফেরানোর লক্ষ্যে কাজ করছে সরকার।
গত বছরের ১৫ নভেম্বর ও চলতি ২২ আগস্ট প্রত্যাবাসনের দুটি সময় নির্ধারণ করা হলেও রোহিঙ্গাদের অনাগ্রহের কারণে প্রত্যাবাসন হয়নি। তবে সরকার প্রত্যাবাসনের ব্যাপারে বদ্ধপরিকর। সে লক্ষ্যে কূটনীতিক তৎপরতা ও চালিয়ে যাচ্ছে।
রোহিঙ্গাদের বাংলাদেশে আসার আজ দুই বছর পূর্ণ হলেও ক্যাম্পগুলোতে এই নিয়ে এবার কোনো আয়োজন থাকছে না বলে জানিয়েছেন শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার মোহাম্মদ আবুল কালাম।
তিনি বলেন, কোন রোহিঙ্গা মিয়ানমারে ফেরার আগ্রহ প্রকাশ করলে আমরা তাকে ফেরত পাঠানোর ব্যবস্থা করব। শনিবার পর্যন্ত ৩৩৯ প্রত্যাবাসনের তালিকায় থাকা পরিবারের সাক্ষাৎকার গ্রহণ করা হয়েছে। রোহিঙ্গাদের মাঝে জন্মনিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি চালুসহ এ ব্যাপারে তাদের সচেতন করতে নানা কার্যক্রম চলছে বলেও জানান তিনি।